বিশ্ব বিখ্যাত এবং দুর্ধর্ষ কয়েকজন হ্যাকার।

হ্যাকার।  শব্দটা ছোট হলেও এটাতে রয়েছে অনেক বড় ভাব এবং মেধার পরিচয়।

যে যত বড় হ্যাকার সে তত টেলেন্টেড এবং তার প্রভাব তত বেশী।

এরকম প্রভাবশালী হ্যাকার ছড়িয়ে আছে সারা বিশ্বে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সাইবার জগৎ।
এদের মধ্যে কেউ নিজের টেলেন্টটাকে ভালো কাজে লাগায় কেউ নিজের অজান্তেই করে বসে অপরাধ আর হয়ে উঠে অপরাধী তাও আবার চোর গুন্ডা নয় তারা সাইবার অপরাধী।

আজ আমরা ঠিক এমনই কিছু দুর্ধর্ষ সাইবার অপরাধী এবং কিছু বিখ্যাত হ্যাকারদের কথা জানবো যারা নিজের অজান্তেই নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়েছেন খারাপ কাজে এবং কাপিয়েছেন সাইবার জগৎ। তো চলুন শুরু করা যাক।

বিশ্ব বিখ্যাত এবং দুর্ধর্ষ কয়েকজন হ্যাকার 


 আলবার্ট গঞ্জালেজঃ সেরা ব্লাক হ্যাট হ্যাকারদের তালিকায় ১০ নম্বরে আছেন আলবার্ট গঞ্জালেজ। টানা দুই বছর ধরে তিনি প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার হ্যাক করেছেন এবং সেই ক্রেডিটকার্ডগুলো আসল মূল্যের চাইতে অনেক কম দামে অনলাইনে বিক্রি করেছেন। ক্রেডিট কার্ড হ্যাকের মাধ্যমে তিনি প্রায় ১০০ কোটি ডলার ভিকটিমদের কাছে থেকে হাতিয়ে নিয়েছিলেন। একসময় তিনি ধরা পরেন এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেন। তাকে ৪০
বছরের কারাভোগ করার নির্দেশ দেয়া হয়।

আসট্রাঃ  আসট্রা নামে যিনি অনলাইনে হ্যাকিং কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি কখনোই নিজের আসল নাম প্রকাশ করেন নি। ২০০২ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যবর্তী পাঁচ বছর সময়ে তার জীবনের সবচাইতে বড় হ্যাকিং কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন। এ সময়ে তিনি প্রতিরক্ষা বাহিনির ওয়েবসাইট হ্যাক করে সমস্ত অস্ত্রের ডিজাইন সংক্রান্ত সমস্ত ডাটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসেন এবং সারা বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন কাস্টমারের কাছে সেই ডাটা ৩৬১ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেন। গ্রীসের এথেন্স শহরের একটি এপার্টমেন্ট থেকে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এবং নিজের অপরাধ স্বীকার করেন।

ওউয়েন ওয়াকারঃ ওউয়েন ওয়াকারের বয়স যখন মাত্র ষোল বছর ছিলো তখন তিনি বিশ্বখ্যাত একটি হ্যাকিং দলের সাথে যুক্ত হন এবং বিভিন্ন কোম্পানির ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করে প্রায় ২৬ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেন। তাছাড়া তার তৈরী বট ভাইরাস সারা পৃথিবীর ১৩ লক্ষ কম্পিউটারকে সম্পুর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিলো। যদিও তিনি নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তবুও তার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ না থাকায় তিনি ছাড়া পেয়ে যান।

গ্যারি ম্যাকিননঃ যারা হ্যাকিং সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানেন তারা অবশ্যই এই নামটি শুনে থাকবেন। বিশ্বের ইতিহাসের সবচাইতে বড় মিলিটারি কম্পিউটার হ্যাকের সাথে জড়িয়ে ছিলেন এই ব্যক্তি। তিনি আমেরিকান আর্মড ফোর্স এবং নাসার ৯৭ টি কম্পিউটার হ্যাক করেন। তিনি শুধু হ্যাক করেন শান্ত থাকেননি বরই আর্মড ফোর্সের কম্পিউটার গুলো থেকে অস্ত্র সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য মুছে দিয়েছিলেন।

জেনসন জেমসঃ জেমসই প্রথম হ্যাকার যিনি হ্যাকিং বট তৈরী করেছিলেন এবং তার তৈরি বট দিয়ে যেসব কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছিলো সবগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিলেন। তার তৈরী বট দিয়ে প্রায় ৫০০,০০০ কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছিলো যার মধ্যে ইউএস মিলিটারি কম্পিউটারও ছিলো।

আদ্রিয়ান লোমোঃ আদ্রিয়ান লোমো বিখ্যাত মাইক্রোসফট, ইয়াহু সহ বড় বড় কোম্পানির ওয়েবসাইট হ্যাক করার জন্য। তিনি শুধু মাইক্রোসফট কিংবা ইয়াহুর ওয়েবসাইট হ্যাক করেন নাই, তিনি হ্যাক করেছেন ব্যাংক অফ আমেরিকা, সিটি গ্রুপ এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতো বিখ্যাত সব ওয়েবসাইট। তাকে আরো বিখ্যাত করে দিয়েছে তার হ্যাক করার পদ্ধতি। তিনি পাবলিক ইন্টারনেট ব্যবহার করে এসব ওয়েবসাইট হ্যাক করেছেন। পাবলিক ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করে হ্যাক করার জন্য তাকে 'হোমলেস হ্যাকার' নামে নতুন উপাধি দেয়া
হয়েছিলো। ২০০৪ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং তাকে ৬ মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। তাছাড়া তাকে ৬৫০০০ ডলার অর্থদন্ডও দিতে হয়েছিলো।

মাফিয়াবয়ঃ মাফিয়াবয় একজন কানাডিয়ান হ্যাকার। তিনি ইয়াহু, ফিফা, অ্যামাজন, সিএনএন, ডেল এর মতো বড় বড় ওয়েবসাইট হ্যাক করেছেন। এর পরেও তাকে মাত্র আট মাসের জেল দেয়া হয়! মাত্র আট মাসের জেল দেয়ার কারণ কি বলতে পারেন? কারণ হলো তখন তিনি মাত্র ক্লাস এইটে পড়তেন।

ম্যাথু বেভান এবং রিচার্ড প্রাইসঃ ১৯৯৬ সালে দুজনের বয়স ছিলো যথাক্রমে ২১ এবং ১৭, সেই সময় তারা হ্যাক করেন ইউএস মিলিটারি কম্পিউটার। তারা শুধু ইউএস মিলিটারি কম্পিউটার হ্যাক করেই শান্ত ছিলেন তা - তারা উত্তর কোরিয়ার সরকারী নিরাপত্তারকাজে নিয়োজিত কম্পিউটারও হ্যাক করেছিলেন।

কেভিন মিটনিকঃ কেভিন মিটনিক হলেন মোস্ট ওয়ান্টেড সাইবার ক্রিমিন্যাল ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড। আইবিএম , মটোরোলা এবং বেশ কিছু টেলিকম কোম্পানির ডাটাবেজ হ্যাক করে তিনি প্রায় এক বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি হানা দিয়েছিলেন আমেরিকান ন্যাশনাল সিকিউরিটি সিস্টেমেও । তিনি দুইবার ধরা পড়েন এবং দুইবারই মুক্তি পেয়ে যান। বর্তমানে তিনি সিকিউরিটি এক্সপার্ট হিসেবে একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন।

রবার্ট মরিসঃ হয়তো দুনিয়া জোড়া বিখ্যাত হবার চিন্তা করেই হ্যাকিং শুরু করেছিল মরিস। ১৯৮৮ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটির ছাত্র থাকা অবস্থায় ৯৯ লাইনের একটা কোড লিখে ছেড়ে দিয়েছিল বিভিন্ন নেটওয়ার্কে। যা খুব দ্রুত শত শত কম্পিউটারকে আক্রমন করে। পরবর্তিতে এই কোড মরিস ওয়ার্ম নামে পরিচিতি লাভ করে। ধরা পরার পর মরিস আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলে, সে কোন খারাপ কাজ করে নি। কোড ছাড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেটের সাথে কতগুলো কম্পিউটার সংযুক্ত আছে তা বের করা। শত শত কম্পিউটারকে আক্রমন করার অপরাধে ১৯৮৯ সালে গ্রেফতার হয় মরিস। পরে অবশ্য ১০ হাজার ডলার জরিমানা দিয়ে মুক্ত হয় সে।

কেভিন পোলসেনঃ ১৯৮৯ সালে কেভিন পোলসেন মানের ২৪ বছর বয়সী এক যুবককে ফ্রেফতার করে এফবিআই। কম্পিউটার ও টেলিফোন সার্ভারে গোপনে প্রবেশের দায়ে গ্রেফতার করা হয় তাকে। কিন্তু গ্রেফতার করে বেশীদিন আটকে রাখা যায়নি তাকে। বিচার শুরুর আগেই কৌশলে জেল থেকে পালিয়ে যায় সে। এর মধ্যে সে একটি ঘটনা ঘটায় লস এঞ্জেলেসে। সেখানকার একটি রেডিও স্টেশন একবার ঘোষণা দেয়, একটি নির্দিষ্ট দিনে তাদের কাছে যত কল আসবে তার মধে ১০৩ নম্বর কলারকে দেয়া হবে একটি দামী পোর্শে গাড়ি। পোলসনও তার কাজের ধারা অনুযায়ী রেডিও স্টেশনের টেলিফোন সুইস বোর্ড লাইন হ্যাক করে বনে যান ১০৩ নম্বর কলার। তারপর দাবি করে পোর্শে গাড়িটি। কিন্তু এত কিছু করেও শেষ রক্ষা হয় নি। দ্রুতই সব ফাঁস হয়ে যায়। অবশেষে পালিয়ে যাবার ১৭ মাসের মাথায় পুনরায় গ্রেফতার হয় পোলসন।

ভ্লাদিমির লেভিনঃ কুখ্যাত হ্যাকার ভ্লাদিমির লেভিনের মূল টার্গেট ছিল বিখ্যাত সিটি ব্যাংক। কয়েকটি কর্পোরেট ইউজারের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে তাদের একাউন্ট থেকে সে সরিয়ে ফেলে ১০.৭ মিলিয়ন ডলার। এসব টাকা সরিয়ে ফেলে সেগুলো পাঠিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ইসরায়েল ও জার্মানির কয়েকটি.ব্যাংক একাউন্টে। এ কাজ অবশ্য লেভিন একা করে নি, তার সহযোগী ছিলো আরো চার-পাঁচজন।
তার সঙ্গী সাথীদের কয়েকজন বিভিন্ন দেশের ওই গোপন একাউন্টগুলো থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ধরা পড়ে। লেভিন নিজেও ধরা পড়ে ১৯৯৫ সালে। বিচারে তার ৩ বচরের জেল ও ২.৫ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়। আর খোয়া যাওয়া ডলারে ৪ লাখ বাদে বাকি সব অর্থই উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

ডেভিড স্মিথঃ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া সর্বপ্রথম ভাইরাসটির শ্রষ্টা হতে চেয়েছিল স্মিথ। ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে বসে চুরি করা একটি এওএল (আমেরিকা অনলাইন) একাউন্ট থেকে একটি ওয়ার্ম ছেড়ে দেয় ইন্টারনেটে। ওয়ার্মটির নাম ছিল মেসিলা। যা পরবর্তিতে ইন্টারনেটে ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে এবং প্রায় ৩০০টি বড় বড় কর্পোরেট প্রতষ্ঠানের নেটওয়ার্কে হামলা চালায়। এর মধ্যে মাইক্রোসফট, ইন্টেল, লুসেন্ট টেকনোলজির মত কোম্পানিও ছিল। গোটা আক্রমনট প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমান ক্ষতি সাধন করে। তবে কাজটি করে বেশিদিন শান্তিতে থাকতে পারেনি স্মিথ। বিচারে তার লম্বা মেয়াদের কারাবাস হলেও পরে তা কমিয়ে নিয়ে আসা হয় মাত্র ২০ মাসে।

আজ এ পর্যন্তই। সবসময় চোখ রাখুন আরোজানি ডট কমে, আশাকরি নিজেও কিছু শিখতে পারবো আপনাদেরও কিছু জানাতে পারবো।  ধন্যবাদ কস্ট করে পোস্টটি পড়ার জন্য। কোথায় ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

তথ্যসূত্র : 
১/ www.techtunes.com.bd/hacking/tune-id/348318
২/ www.techtunes.com.bd/hacking/tune-id/15475
৩/ www.google.com 
Share on Google Plus

About S Alam

প্রযুক্তির ব্যাপারে আগ্রহ অনেক। তাই জানতে চেস্টা করি এবং জানা জিনিসগুলো সবার মাধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। আর সেই উদ্দেশ্যেই আমার এ লেখা।
    Blogger
    Facebook

0 comments:

Post a Comment

পোস্টটি পড়ার পর যদি আপনার এ সম্পর্কিত কোন সমস্যা, তথ্য বা ত্রুটি পেয়ে থাকেন তবে দয়াকরে একটি কমেন্ট করুন।